December 23, 2024, 2:44 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
বাংলাদেশ চলতি অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে মানতে নারাজ দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক দল বিজেপি। তাদের সাফ বক্তব্য, অর্থনীতিতে বাংলাদেশ এত পোক্ত হলে ভারত সীমান্তে বাংলাদেশ থেকে এত অনুপ্রবেশ ঘটতো না। অনেক ভারতীয়ও এমনটি মনে করে। তারা সোশাল মিডিয়াতে এ নিয়ে উল্টোপাল্টা মন্তব্য করছে।
এ নিয়ে ভারতীয় পত্রপত্রিকাও কয়েকদিনে ধরে লেখালেখি করছে।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড লিখেছে, কানাডা থেকে মিশিসিপিতে যেভাবে অনুপ্রবেশ ঘটছে বাংলাদেশ থেকেও ভারতে সেই ভাবেই অনুপ্রবেশ হচ্ছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার বাংলা দৈনিক ‘এই সময়’ লিখেছে, বিজেপি বাংলাদেশের জিডিপি নিয়ে যেভাবে সরব হয়েছিল, এবারও ব্লুমবার্গের রিপোর্ট নিয়েও তারা সরব হয়েছে। তাদের আপত্তি স্ফীত সংখ্যা নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়াও চুপ করে বসে নেই। কেউ কেউ তো ফিগারগুলিকে কাল্পনিক বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও ধর্মের দ্বারা অনুশাসিত কিছু রাজ্যের অর্থনীতির থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি তোলা হয়েছে।
৫০ বছর আগে, ১৯৭১ সালের মার্চে দেশটির পুনর্ঘটনের জন্যে ইউনিসেফের উদ্যোগে পন্ডিত রবিশঙ্কর এবং জর্জ হ্যারিসনকে তাদের দল নিয়ে বিশ্বজুড়ে কনসার্ট করে অর্থসংগ্রহ করতে হয়েছিল।
আর আজ ২০২১ সালের জুনে সেই দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার নতুন অর্থনৈতিক তারকা। বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক রেটিং সংস্থা ব্লুমবার্গের এই মূল্যায়নে হইচই পড়ে গেছে কলকাতা থেকে প্রকাশিত পত্র পত্রিকায়।
ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে যে, দক্ষিন এশিয়ার অর্থনৈতিক জায়ান্ট ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ, পিছনে ফেলে দিয়েছে পাকিস্তানকেও।
ব্লুমবার্গ আরও জানিয়েছে , একটি দেশের মোট জনসংখ্যা যত, সেই দেশের মোট আয়কে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলেই সেই দেশের মাথাপিছু আয় বা পার ক্যাপিটা ইনকাম বেরিয়ে আসে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। ভারতের মাথাপিছু আয় সেখানে ১ হাজার ৯৪০ ডলার, পাকিস্তানের ১ হাজার ৫৪৩ ডলার। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১০ বছরে নয় শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে রেটিং সংস্থাটি জানিয়েছে। কিন্তু, কিভাবে বাংলাদেশের এই উন্নতি? ব্লুমবার্গ সেটিও জানিয়েছে।
তারা বলেছে, রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি। সামাজিক অগ্রগতি এবং আর্থিক সংযম বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মত কাজ করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার সময় বিত্তে তাদের থেকে ৭০ শতাংশ এগিয়েছিল পাকিস্তান। এখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের থেকে ৪৫ শতাংশ বিত্তবান। ২০১১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বিশ্বের রপ্তানি যেখানে ০.৪ শতাংশ, বাংলাদেশের রপ্তানি সেখানে ৮.৪ শতাংশ।
পোশাক রপ্তানি এ ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে। শ্রমিক, বিশেষ করে মহিলা শ্রমিকের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে ভারত ও পাকিস্তানকে। ঋণ ও আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেখানে নিজেদের ৪০ শতাংশে বেঁধে রাখতে পেরেছে, ভারত বা পাকিস্তান তা পারেনি। দুটি দেশেরই ঋণ ও আয় প্রায় নব্বই শতাংশ। ঋণ ও লগ্নির ক্ষেত্রেও বিদেশী সংস্থার অংশগ্রহণে বাংলাদেশ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। ব্লুমবার্গ অবশ্য এই আগ্রগমনে একটি অশনি সংকেতও দেখছে।
বাংলাদেশ এতদিন পর্যন্ত মাশুল মুক্ত বাণিজ্যের সুবিধা পেত। এবার পাবে কি? নাকি তাদের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় আসতে হবে? বাংলাদেশ সরকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করার ব্যাপারে অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনসের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছে বলে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে।
Leave a Reply